Skip to main content

উত্তরাধিকার সনদ কীভাবে নেবেন?

হঠাৎ করে বাবুলের (ছদ্মনাম) বাবা মারা গেলেন। দুই ভাই, এক বোন ও মাকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়লেন বাবুল। বাবার মৃত্যুর পর ব্যাংক থেকে টাকা ওঠাতে পারছেন না তাঁরা। ব্যাংক থেকে তাঁকে জানানো হয় যে তাঁর বাবার নামে জমানো টাকা ওঠাতে চাইলে তাঁদের উত্তরাধিকার সনদ জমা দিতে হবে। এই সনদ ছাড়া ব্যাংকের টাকা তোলা যাবে না। উত্তরাধিকার সনদ হচ্ছে কোনো মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার বা ওয়ারিশ কতজন এবং মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া অর্থ কে কতটুকু পাবেন, সে সম্পর্কে আদালত থেকে জারি করা একটি সনদ। এ সনদ শুধু মৃত ব্যক্তির অর্থসংক্রান্ত বিষয়ে দেওয়া হয়ে থাকে, জমিজমা বিষয়ে জারি করা হয় না।
কীভাবে আবেদন করতে হয়
উত্তরাধিকার সনদ তুলতে হয় জেলা জজ আদালত থেকে। মৃত ব্যক্তির হিসাবের টাকা তোলার জন্য জেলা জজ আদালতে বা জেলা জজের মনোনীত অন্য কোনো আদালত থেকে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে এ সনদ তুলতে হয়। ঢাকায় তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতকে এ সনদ-সংক্রান্ত বিষয় নিষ্পত্তির এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। মৃত ব্যক্তির বৈধ উত্তরাধিকারীরা প্রত্যেকে কিংবা তাঁদের পক্ষে যিনি টাকা তুলবেন, তাঁকে আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে আরজি দাখিল করতে হবে। আবেদনের সঙ্গে হলফনামা দিতে হবে, যাতে উল্লেখ থাকবে—
১। তিনি মৃত ব্যক্তির সম্পর্কে কী হন
২। মৃত ব্যক্তির এ টাকা কাউকে দান বা উইল করে যাননি
৩। উইলের জন্য কোনো প্রবেট বা লেটার অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন দরখাস্ত দাখিল করে যাননি
৪। তাঁকে অন্য উত্তরাধিকারীরা টাকা তোলার ক্ষমতা দান করেছেন। আরজিতে মৃত ব্যক্তির টাকার হিসাবের বিবরণ তফসিল আকারে দিতে হবে।
৫। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা চেয়ারম্যান অফিস বা কমিশনারের কাছ থেকে মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে। মৃত ব্যক্তিকে যে কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে, সে মর্মে একটি প্রত্যয়নপত্র।
৬। মৃত ব্যক্তি যদি কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিকে মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে সেখান থেকে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দিতে হবে।
৭। মৃত ব্যক্তি কোন ব্যাংকে কত টাকা রেখে গেছেন, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে একটি সনদ (ব্যালান্স কনফারমেশন লেটার) ওঠাতে হবে এবং আদালতে জমা দিতে হবে।
৮। আদালতে আবেদন করার পর আদালত আবেদনকারীর জবানবন্দি নেবেন এবং সততা যাচাই করবেন। পরবর্তী সময়ে আদালতে নির্দিষ্ট কোর্ট ফি জমা দেওয়ার জন্য আদেশ দেবেন। কোর্ট ফি জমা দেওয়া হলে পরে সনদ জারি করবেন।
কোর্ট ফি কত লাগবে
২০ হাজার টাকা পর্যন্ত কোনো কোর্ট ফি দিতে হয় না। কিন্তু ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ১ শতাংশ কোর্ট ফি দিতে হয়। আবার এক লাখ এক টাকা থেকে যেকোনো পরিমাণ অর্থের ওপর ২ শতাংশ কোর্ট ফি জমা দিতে হয়।
জেনে রাখুন
সাধারণত উত্তরাধিকার সনদ পেতে দুই থেকে ছয় মাস সময় লাগতে পারে। তবে মৃত ব্যক্তি যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার জন্য ব্যাংকে কোনো নমিনি করে দিয়ে থাকেন, তাহলে ওই নমিনির টাকা তোলার জন্য উত্তরাধিকার সনদ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না, কিন্তু অনেক ব্যাংকে এ টাকা তোলার জন্য জমা দেওয়া লাগতে পারে। কোনো কারণে আবেদন খারিজ হলে জেলা জজ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপিলের সুযোগ রয়েছে।

Comments

Popular posts from this blog

ফৌজদারি মামলা ?

কোন আদালতে ফৌজদারি মামলা পরিচালিত হয়? √সাধারন ভাষায় কোন ব্যক্তিকে যখন মারামারি, চুরি,ডাকাতি,খুন, যখম, প্রতারনা, দস্যুতা, রেইপ, অপহরণ, বে-আইনি সমাবেশ, ইভ-টিজিং , জালিয়াতি, মিথ্যা সাক্ষ্যদান প্রভুতি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে তার বিরুদ্বে মামলা দায়ের করা হয় তাকে বলে ফৌজদারি মামলা ক্রিমিনাল কেস। পেনাল কোডে অপরাধ এবং এর শাস্তির পরিমাণ উল্লেখ আছে কিন্তু কিভাবে অপরাধিকে শাস্তি দেয়া হবে তার কথা উল্লেখ আছে কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮ বা ফৌজদারি কার্যবিধিতে। ব্যাপক ভাবে ক্রিমিনাল আদালত তিনভাগে বিভক্ত: (ধারা-৬) ব্যক্তির অধিকার ও সম্পত্তির অধিকার ব্যতিত যেকোনো অপরাধ ফৌজদারি মামলার অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় রাজনৈতিক হাঙ্গামা, ব্যক্তির জীবন হরণ, অর্থসম্পদ লুটপাট ও যৌন হয়রানির অপরাধে ফৌজদারি মামলার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। এক কথায় চুরি, ডাকাতি, খুন, জখম, প্রতারণা, দস্যুতা, লুটপাট, বিস্ফোরণ, ধর্ষণ, অপহরণ, বেআইনি সমাবেশ, যৌন হয়রানি, জালিয়াতি, মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান প্রভৃতি অপরাধে যেসব মামলা দায়ের করা হয় তাকে ফৌজদারি মামলা বলা হয়। এসব মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে জেল জরিমানা...

প্লাস্টিকের পাত্রে গরম চা হয়ে ওঠে বিষাক্ত খাবার!

আমাদের আড্ডায় অন্যতম অনুসঙ্গ হয়ে উঠেছে চা-কফি। রাস্তার পাশের ছোট চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন রেস্তোরায় চা-কফির পেয়ালা হিসেবে প্লাস্টিকের তৈরি ওয়ানটাইম গ্লাস বেশ জনপ্রিয়। চা কফি, গরম স্যুপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন তরল খাবার আমরা খেয়ে থাকি এই সব প্লাস্টিক সামগ্রিতে। ক্রেতারা নিজের মতো বহন করতে পারেন, আর বিক্রেতারা সহজলভ্যতার কারনে এসব প্লাস্টিকের সামগ্রী ব্যবহার করেন। কিন্তু এর ক্ষতিকারক দিকটি জানা আছে কি? চিকিৎসকরা বলছেন এই প্লাস্টিকের সামগ্রীতে গরম তরল খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ থেকে অনেক জটিল জটিল রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। প্লাস্টিকের পাত্রে গরম খাবার খাওয়া একদমই ঠিক না। হার্ট, কিডনি, লিভার, ফুসফুস এবং ত্বকও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমনকী, স্তন ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। পুরুষদের ক্ষেত্রে শুক্রানু কমে যায়। গবেষকরা জানিয়েছেন, প্লাস্টিকের মধ্যে থাকা বিসফেনল-এ নামের টক্সিক এ ক্ষেত্রে বড় ঘাতক। গরম খাবার বা পানীয় প্লাস্টিকের সংস্পর্শে এলে ওই রাসায়নিক খাবারের সঙ্গে মেশে। এটি নিয়মিত শরীরে ঢুকলে মহিলাদের ইস্ট্রোজেন হরমোনের কাজের স্বাভাবিকতা বিঘ্নিত হয়। প্লা...

পুলিশ পেট্রোল বা পুলিশ টহল কত প্রকার ও কি কি?

পেট্রোল ডিউটি পুলিশ অফিসারদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ডিউটি। পুলিশ পেট্রোল ডিউটিকে সাধারণ ৮ ভাগে ভাগ করা যায়। নিম্নে এ গুলোর বর্ণনা করা হলোঃ ১। ফুট পেট্রোলঃ পায়ে হেঁটে নির্ধারিত স্থানে পাহারা দেয়াকে ফুট পেট্রোল বলে। ২। মোবাইল পেট্রোলঃ গাড়ীতে চড়ে নির্দিষ্ট এলাকা পাহারা দেয়াকে মোবাইল পেট্রোল বলে। ৩। বোট পেট্রোলঃ নৌকা, লঞ্চ বা স্পীড বোটে চড়ে নদী বা হাওরে পাহারা দেয়াকে বোট পেট্রোল বলে। ৪। ফিক্সড পেট্রোলঃ রাস্তার সংযোগস্থলে, হাটে, বাজারে, রেলস্টেশন ইত্যাদি স্থানে দাঁড়িয়ে পাহারা দেয়াকে ফিক্সড পেট্রোল বলে। ৫। ব্লক পেট্রোলঃ কোন নির্দিষ্ট স্থান ঘেরাও করে ঐ স্থানের জনগণের গতিবিধি লক্ষ্য করাকে ব্লক পেট্রোল বলে। ৬। এ্যাম্বুস পেট্রোলঃ কোন নির্দিষ্ট এলাকায় গোপনভাবে চুপচাপ বসে থেকে পথিকের গতিবিধি লক্ষ্য করাকে এ্যাম্বুস পেট্রোল বলে। ৭। ক্লক ওয়াইজ ও এন্টি ক্লক ওয়াইজ পেট্রোলঃ ঘড়ির কাটা যেভাবে ঘোরে ঐভাবে যথা “ক” সেন্টার হতে এক পার্টি পেট্রোল করতে করতে কোন নির্দিষ্ট স্থানে পৌছবে এবং ঐ পার্টি পথিমধ্যে সন্দেহজনক ব্যক্তি পেলে চ্যালেঞ্জ করবে ও প্রয়োজনে গ্রেফতার করবে। অন্য কোন পার্টি ঐ “ক” স...