
উচ্চতম আদালতের রায় বা সেই আদালতে আইনি লড়াই মোটেই হাসি-তামাশার ব্যাপার নয়। উচ্চ আদালতে কঠিন ও জটিল আইনি বিষয়ে ব্যাখ্যা ও সুরাহা হয়। তবে সব সময় এই আইনি লড়াইগুলোকে খুব সিরিয়াসলি নিলে আইন রসকষবিহীন শুষ্ক ব্যাপারে পরিণত হতে পারে। আইনের ছাত্রছাত্রী ও তরুণ আইনজীবীরা ভয়ে আইন পেশা থেকে দূরে সরে যেতে পারেন। তবে বলা বাহুল্য, আইন নাচ-গানে ভরপুর ঢালিউডের সিনেমার মতো উপভোগ্য কোনো ব্যাপার নিশ্চয়ই নয়। তাই আইন নিয়ে মাঝেমধ্যে কিছু হাসি-তামাশার দরকার আছে। সেই উপলব্ধি থেকেই আজকের এই রম্য বয়ান।
আলোকচিত্রী কারাবন্দী শহিদুল আলম কারাগারের মেঝেতে ঘুমাবেন, না খাটে ঘুমাবেন—এ নিয়ে বিরাট আইনি লড়াই। আগেই বলেছি, সদ্য শেষ হয়েছে।
খুলে বলি, পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের সূত্র ধরে। ২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর ৫ম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম ‘শহিদুলের প্রথম শ্রেণির বন্দিসুবিধার আদেশ স্থগিত হয়নি’। শহিদুল আলম গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এ বছরের ৫ আগস্ট। কারা কর্তৃপক্ষ তাঁকে প্রথম শ্রেণির বন্দিসুবিধা দেয়নি, কারাগারে রেখেছিল হাজারো সাধারণ কয়েদির মতো। কারা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রথম শ্রেণি চেয়ে আবেদন–নিবেদন করা হয়েছিল। কাজ হয়নি। পত্রিকা থেকে জানলাম, এক মাস পর ৫ সেপ্টেম্বর কারাগারে শহিদুল আলমের জন্য প্রথম শ্রেণির কয়েদি সুযোগ–সুবিধা চেয়ে রিট মামলা করা হয়। হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ সেই রিট মামলায় শহিদুল আলমকে প্রথম শ্রেণি বা ডিভিশন দেওয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেন।
কারা কর্তৃপক্ষ কারাগার কীভাবে পরিচালনা করবে, বন্দীরা সকালে কখন ঘুম থেকে উঠবেন, হাত–মুখ ধোয়ার জন্য কতটুকু সময় বরাদ্দ, তারপর কখন কী করবেন এবং শেষতক রাতে কখন সব বাতি নিভিয়ে দেওয়া হবে ইত্যাদি খুঁটিনাটিসহ বিশদ বিবরণ আছে যে আইনে, তার নাম জেল কোড। কারা কর্তৃপক্ষের কী কী দায়িত্ব ও ক্ষমতা, কারাবন্দীদের বিরুদ্ধে নিয়ম ভঙ্গের জন্য কী ব্যবস্থা নিতে পারবে ইত্যাদিসহ মোট ১৩৮৮টি ধারা আছে প্রায় ৪০০ পৃষ্ঠার আইনের এই জেল কোডে। কোনো কারাবন্দী জেল কোড অনুযায়ী প্রাপ্য সুযোগ–সুবিধা পাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে মামলা–মোকদ্দমা হয় না বললেই চলে। অতএব আমরা আইনজীবীরা এই আইন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করি না, জানি না বললেই চলে। কারাগারের অভ্যন্তরে কী হয়, এ নিয়ে ইদানীং কোনো লেখালেখিও চোখে পড়েনি। ২০০০ সালে কারাজীবন, কারাব্যবস্থা, কারা বিদ্রোহ: অনুসন্ধান ও পর্যালোচনা নামে আলতাফ পারভেজের লেখা একটা বই প্রকাশিত হয়েছিল। এত কথা ইনিয়ে–বিনিয়ে বলার উদ্দেশ্য হলো কারাগারে সাধারণ আর প্রথম শ্রেণির বন্দীদের সুযোগ–সুবিধা সম্পর্কে বিশদ জানা নাই। তাই দু–একজনের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া ধারণা থেকে বলছি, সাধারণ বন্দীদের কারাগারের মেঝেতে ঘুমাতে হয় গাদাগাদি করে, নড়াচড়া না করে এবং আনুষঙ্গিক নানা কষ্ট ও অসুবিধার মধ্যে। প্রথম শ্রেণি (ডিভিশন) পেলে ঘুমানোর জন্য মেঝের পরিবর্তে খাট পাওয়া যায়, আরও দু–চারটা বাড়তি সুবিধা যেমন পড়ার জন্য বই, সম্ভবত লেখালেখির জন্য কাগজ–কলম। ডিভিশন পাওয়ার পর শহিদুল আলম এই সুবিধাগুলো সম্ভবত পাচ্ছেন।
হাইকোর্টের দেওয়া ডিভিশন আদেশ বাতিল চেয়ে মাননীয় অ্যাটর্নি জেনারেল চেম্বার জজের আদালতে তড়িঘড়ি করে প্রাথমিক আবেদন করেন ১৭ সেপ্টেম্বর। মাননীয় আদালত প্রাথমিক আবেদনের পরিবর্তে পূর্ণাঙ্গ আবেদন করতে বলেন। মাননীয় অ্যাটর্নি জেনারেল সেই আবেদন নিয়ে আবার চেম্বার জজের কাছে হাজির হয়েছিলেন ২৫ সেপ্টেম্বর। এবং চেম্বার জজ বলেন, ডিভিশন বাতিল চেয়ে এই আবেদনের শুনানি হবে ছুটি শেষে আদালত খোলার প্রথম দিনেই, অর্থাৎ পয়লা অক্টোবর।
- Get link
- X
- Other Apps
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment