Skip to main content

মেঝে ও খাটের আইনি লড়াই শেষ


শহিদুল আলম গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এ বছরের ৫ আগস্ট। প্রথমে কারা কর্তৃপক্ষ তাঁকে প্রথম শ্রেণির বন্দিসুবিধা দেয়নিশহিদুল আলম গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এ বছরের ৫ আগস্ট। প্রথমে কারা কর্তৃপক্ষ তাঁকে প্রথম শ্রেণির বন্দিসুবিধা দেয়নি২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের তিন মাননীয় বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তে একটা গুরুত্বপূর্ণ আইনি লড়াই শেষ হয়েছে। রায় হয়েছে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার ও কারারুদ্ধ আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের পক্ষে।
উচ্চতম আদালতের রায় বা সেই আদালতে আইনি লড়াই মোটেই হাসি-তামাশার ব্যাপার নয়। উচ্চ আদালতে কঠিন ও জটিল আইনি বিষয়ে ব্যাখ্যা ও সুরাহা হয়। তবে সব সময় এই আইনি লড়াইগুলোকে খুব সিরিয়াসলি নিলে আইন রসকষবিহীন শুষ্ক ব্যাপারে পরিণত হতে পারে। আইনের ছাত্রছাত্রী ও তরুণ আইনজীবীরা ভয়ে আইন পেশা থেকে দূরে সরে যেতে পারেন। তবে বলা বাহুল্য, আইন নাচ-গানে ভরপুর ঢালিউডের সিনেমার মতো উপভোগ্য কোনো ব্যাপার নিশ্চয়ই নয়। তাই আইন নিয়ে মাঝেমধ্যে কিছু হাসি-তামাশার দরকার আছে। সেই উপলব্ধি থেকেই আজকের এই রম্য বয়ান।
আলোকচিত্রী কারাবন্দী শহিদুল আলম কারাগারের মেঝেতে ঘুমাবেন, না খাটে ঘুমাবেন—এ নিয়ে বিরাট আইনি লড়াই। আগেই বলেছি, সদ্য 
শেষ হয়েছে।
খুলে বলি, পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের সূত্র ধরে। ২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর ৫ম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম ‘শহিদুলের প্রথম শ্রেণির বন্দিসুবিধার আদেশ স্থগিত হয়নি’। শহিদুল আলম গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এ বছরের ৫ আগস্ট। কারা কর্তৃপক্ষ তাঁকে প্রথম শ্রেণির বন্দিসুবিধা দেয়নি, কারাগারে রেখেছিল হাজারো সাধারণ কয়েদির মতো। কারা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রথম শ্রেণি চেয়ে আবেদন–নিবেদন করা হয়েছিল। কাজ হয়নি। পত্রিকা থেকে জানলাম, এক মাস পর ৫ সেপ্টেম্বর কারাগারে শহিদুল আলমের জন্য প্রথম শ্রেণির কয়েদি সুযোগ–সুবিধা চেয়ে রিট মামলা করা হয়। হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ সেই রিট মামলায় শহিদুল আলমকে প্রথম শ্রেণি বা ডিভিশন দেওয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেন।
কারা কর্তৃপক্ষ কারাগার কীভাবে পরিচালনা করবে, বন্দীরা সকালে কখন ঘুম থেকে উঠবেন, হাত–মুখ ধোয়ার জন্য কতটুকু সময় বরাদ্দ, তারপর কখন কী করবেন এবং শেষতক রাতে কখন সব বাতি নিভিয়ে দেওয়া হবে ইত্যাদি খুঁটিনাটিসহ বিশদ বিবরণ আছে যে আইনে, তার নাম জেল কোড। কারা কর্তৃপক্ষের কী কী দায়িত্ব ও ক্ষমতা, কারাবন্দীদের বিরুদ্ধে নিয়ম ভঙ্গের জন্য কী ব্যবস্থা নিতে পারবে ইত্যাদিসহ মোট ১৩৮৮টি ধারা আছে প্রায় ৪০০ পৃষ্ঠার আইনের এই জেল কোডে। কোনো কারাবন্দী জেল কোড অনুযায়ী প্রাপ্য সুযোগ–সুবিধা পাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে মামলা–মোকদ্দমা হয় না বললেই চলে। অতএব আমরা আইনজীবীরা এই আইন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করি না, জানি না বললেই চলে। কারাগারের অভ্যন্তরে কী হয়, এ নিয়ে ইদানীং কোনো লেখালেখিও চোখে পড়েনি। ২০০০ সালে কারাজীবন, কারাব্যবস্থা, কারা বিদ্রোহ: অনুসন্ধান ও পর্যালোচনা নামে আলতাফ পারভেজের লেখা একটা বই প্রকাশিত হয়েছিল। এত কথা ইনিয়ে–বিনিয়ে বলার উদ্দেশ্য হলো কারাগারে সাধারণ আর প্রথম শ্রেণির বন্দীদের সুযোগ–সুবিধা সম্পর্কে বিশদ জানা নাই। তাই দু–একজনের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া ধারণা থেকে বলছি, সাধারণ বন্দীদের কারাগারের মেঝেতে ঘুমাতে হয় গাদাগাদি করে, নড়াচড়া না করে এবং আনুষঙ্গিক নানা কষ্ট ও অসুবিধার মধ্যে। প্রথম শ্রেণি (ডিভিশন) পেলে ঘুমানোর জন্য মেঝের পরিবর্তে খাট পাওয়া যায়, আরও দু–চারটা বাড়তি সুবিধা যেমন পড়ার জন্য বই, সম্ভবত লেখালেখির জন্য কাগজ–কলম। ডিভিশন পাওয়ার পর শহিদুল আলম এই সুবিধাগুলো সম্ভবত পাচ্ছেন।
হাইকোর্টের দেওয়া ডিভিশন আদেশ বাতিল চেয়ে মাননীয় অ্যাটর্নি জেনারেল চেম্বার জজের আদালতে তড়িঘড়ি করে প্রাথমিক আবেদন করেন ১৭ সেপ্টেম্বর। মাননীয় আদালত প্রাথমিক আবেদনের পরিবর্তে পূর্ণাঙ্গ আবেদন করতে বলেন। মাননীয় অ্যাটর্নি জেনারেল সেই আবেদন নিয়ে আবার চেম্বার জজের কাছে হাজির হয়েছিলেন ২৫ সেপ্টেম্বর। এবং চেম্বার জজ বলেন, ডিভিশন বাতিল চেয়ে এই আবেদনের শুনানি হবে ছুটি শেষে আদালত খোলার প্রথম দিনেই, অর্থাৎ পয়লা অক্টোবর।

Comments

Popular posts from this blog

ফৌজদারি মামলা ?

কোন আদালতে ফৌজদারি মামলা পরিচালিত হয়? √সাধারন ভাষায় কোন ব্যক্তিকে যখন মারামারি, চুরি,ডাকাতি,খুন, যখম, প্রতারনা, দস্যুতা, রেইপ, অপহরণ, বে-আইনি সমাবেশ, ইভ-টিজিং , জালিয়াতি, মিথ্যা সাক্ষ্যদান প্রভুতি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে তার বিরুদ্বে মামলা দায়ের করা হয় তাকে বলে ফৌজদারি মামলা ক্রিমিনাল কেস। পেনাল কোডে অপরাধ এবং এর শাস্তির পরিমাণ উল্লেখ আছে কিন্তু কিভাবে অপরাধিকে শাস্তি দেয়া হবে তার কথা উল্লেখ আছে কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮ বা ফৌজদারি কার্যবিধিতে। ব্যাপক ভাবে ক্রিমিনাল আদালত তিনভাগে বিভক্ত: (ধারা-৬) ব্যক্তির অধিকার ও সম্পত্তির অধিকার ব্যতিত যেকোনো অপরাধ ফৌজদারি মামলার অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় রাজনৈতিক হাঙ্গামা, ব্যক্তির জীবন হরণ, অর্থসম্পদ লুটপাট ও যৌন হয়রানির অপরাধে ফৌজদারি মামলার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। এক কথায় চুরি, ডাকাতি, খুন, জখম, প্রতারণা, দস্যুতা, লুটপাট, বিস্ফোরণ, ধর্ষণ, অপহরণ, বেআইনি সমাবেশ, যৌন হয়রানি, জালিয়াতি, মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান প্রভৃতি অপরাধে যেসব মামলা দায়ের করা হয় তাকে ফৌজদারি মামলা বলা হয়। এসব মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে জেল জরিমানা...

প্লাস্টিকের পাত্রে গরম চা হয়ে ওঠে বিষাক্ত খাবার!

আমাদের আড্ডায় অন্যতম অনুসঙ্গ হয়ে উঠেছে চা-কফি। রাস্তার পাশের ছোট চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন রেস্তোরায় চা-কফির পেয়ালা হিসেবে প্লাস্টিকের তৈরি ওয়ানটাইম গ্লাস বেশ জনপ্রিয়। চা কফি, গরম স্যুপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন তরল খাবার আমরা খেয়ে থাকি এই সব প্লাস্টিক সামগ্রিতে। ক্রেতারা নিজের মতো বহন করতে পারেন, আর বিক্রেতারা সহজলভ্যতার কারনে এসব প্লাস্টিকের সামগ্রী ব্যবহার করেন। কিন্তু এর ক্ষতিকারক দিকটি জানা আছে কি? চিকিৎসকরা বলছেন এই প্লাস্টিকের সামগ্রীতে গরম তরল খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ থেকে অনেক জটিল জটিল রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। প্লাস্টিকের পাত্রে গরম খাবার খাওয়া একদমই ঠিক না। হার্ট, কিডনি, লিভার, ফুসফুস এবং ত্বকও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমনকী, স্তন ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। পুরুষদের ক্ষেত্রে শুক্রানু কমে যায়। গবেষকরা জানিয়েছেন, প্লাস্টিকের মধ্যে থাকা বিসফেনল-এ নামের টক্সিক এ ক্ষেত্রে বড় ঘাতক। গরম খাবার বা পানীয় প্লাস্টিকের সংস্পর্শে এলে ওই রাসায়নিক খাবারের সঙ্গে মেশে। এটি নিয়মিত শরীরে ঢুকলে মহিলাদের ইস্ট্রোজেন হরমোনের কাজের স্বাভাবিকতা বিঘ্নিত হয়। প্লা...

পুলিশ পেট্রোল বা পুলিশ টহল কত প্রকার ও কি কি?

পেট্রোল ডিউটি পুলিশ অফিসারদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ডিউটি। পুলিশ পেট্রোল ডিউটিকে সাধারণ ৮ ভাগে ভাগ করা যায়। নিম্নে এ গুলোর বর্ণনা করা হলোঃ ১। ফুট পেট্রোলঃ পায়ে হেঁটে নির্ধারিত স্থানে পাহারা দেয়াকে ফুট পেট্রোল বলে। ২। মোবাইল পেট্রোলঃ গাড়ীতে চড়ে নির্দিষ্ট এলাকা পাহারা দেয়াকে মোবাইল পেট্রোল বলে। ৩। বোট পেট্রোলঃ নৌকা, লঞ্চ বা স্পীড বোটে চড়ে নদী বা হাওরে পাহারা দেয়াকে বোট পেট্রোল বলে। ৪। ফিক্সড পেট্রোলঃ রাস্তার সংযোগস্থলে, হাটে, বাজারে, রেলস্টেশন ইত্যাদি স্থানে দাঁড়িয়ে পাহারা দেয়াকে ফিক্সড পেট্রোল বলে। ৫। ব্লক পেট্রোলঃ কোন নির্দিষ্ট স্থান ঘেরাও করে ঐ স্থানের জনগণের গতিবিধি লক্ষ্য করাকে ব্লক পেট্রোল বলে। ৬। এ্যাম্বুস পেট্রোলঃ কোন নির্দিষ্ট এলাকায় গোপনভাবে চুপচাপ বসে থেকে পথিকের গতিবিধি লক্ষ্য করাকে এ্যাম্বুস পেট্রোল বলে। ৭। ক্লক ওয়াইজ ও এন্টি ক্লক ওয়াইজ পেট্রোলঃ ঘড়ির কাটা যেভাবে ঘোরে ঐভাবে যথা “ক” সেন্টার হতে এক পার্টি পেট্রোল করতে করতে কোন নির্দিষ্ট স্থানে পৌছবে এবং ঐ পার্টি পথিমধ্যে সন্দেহজনক ব্যক্তি পেলে চ্যালেঞ্জ করবে ও প্রয়োজনে গ্রেফতার করবে। অন্য কোন পার্টি ঐ “ক” স...