Skip to main content

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি বা আসামীর আইনি অধিকার

‘গ্রেপ্তার ‘ শব্দটি প্রতিদিন প্রত্রিকার পাতায় টেলিভিশনের খবরে আমরা পড়ি এবং দেখি। ব্যাক্তিগত, পারিবারিক বা ব্যবসায়িক, সামাজিক সহিংসতার পাশাপাশি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক কর্মকান্ড সহ নানা কারনে গ্রেপ্তার শব্দটা আমাদের জীবনে প্রতিদিনকার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। আত্বীয়- স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী- পরিচিতজন কিংবা আপনি নিজে গ্রেপ্তার হতে পারেন যে কোন সময় । একজন ব্যাক্তি যে কারণেই গ্রেপ্তার হউক না কেন সে আইনগতভাবেই অনেক অধিকার পাবেন। কিন্তু বাস্তবতা হল আইন সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ ছাড়া অনেকই এই অধিকার সমূহ সম্পর্কে তেমন কিছু সঠিকভাবে জানেন না বললেই চলে। বিশেষ করে সাধারণ মানুষ যাদের আইন সম্পর্কিত ধারণা কম। যার ফলে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হন এবং বিভিন্ন ঝক্কিঝামেলা, হয়রানি, বিড়ম্বনা নির্যাতন, নিপীড়ন, আত্যাচার, জুলুমের স্বীকার হন। আশা করি এই আলোচনাটি নানানরকম ধোয়াঁশা কাটিয়ে অন্তত কিছুটা হলেও সেইসব অধিকার সম্পর্কে জানতে পারবেন যদি মনযোগ সহকারে পড়েন।
তবে এই লেখায় আমি গ্রেপ্তার সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলব না। শুধুমাত্র একজন গ্রেফতারকৃত ব্যাক্তির আইনগত অধিকার সমূহ আলোচনা করব। আমাদের দেশের বিদ্যমান আইন সমূহে গ্রেপ্তার সংক্রান্ত বিধানগুলো বিশ্লেষন করলে দেখতে পায় যে, কোন ব্যক্তিকে তার স্বাধীনভাবে চলাফেরার ক্ষমতাসহ কতিপয় অধিকার হরণ করে আটক করার মাধ্যমে আইনের হেফাজতে বা আওতায় নেওয়াকে গ্রেফতার বলে। এই আটক বিভিন্ন ধরনের হতে পারে যেমন- শান্তি ভঙ্গের আশঙ্কায়, কৃত অপরাধের শাস্তি প্রদানের উদ্দেশ্যে অথবা নিরাপত্তা দানের উদ্দেশ্যে। একজন ব্যাক্তিকে যে কারণেই গ্রেপ্তার করা হউক না কেন তাকে কোনভাবেই নিম্মোক্ত অধিকারসমূহ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। এইগুলো আইনগত ভাবেই তার প্রাপ্য। দেশের পবিত্র সংবিধান, ফৌজদারি কার্যবিধি, পিআরবি, দন্ডবিধিসহ বেশ কিছু আইনে এই অধিকারসমূহ সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে।
কোন পুলিশ অফিসার গ্রেপ্তার কার্যকর করতে গেয়ে যুক্তিসংগত কারন ছাড়া কোনভাবেই শারীরিক বা মানসিক আঘাত করতে পারেবেন না। আর যদি করতেই হয় তাহলে তা যতটুকু প্রয়োজন ঠিক তার অধিক করা যাবে না । গ্রেপ্তারের পূর্বে আটকস্ত ব্যক্তিকে পুলিশ নিজের পরিচয় দিবেন এবং কারণ দর্শাবেন অর্থাৎ গ্রেপ্তারের সময় ধৃত বক্তির এ অধিকার আছে যে, কোন কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং তার গ্রেপ্তারের জন্য কোনো ওয়ারেন্ট আছে কিনা প্রভৃতি। তার মানে এই নয় যে, গ্রেপ্তার করতে হলে অবশ্যই ওয়ারেন্ট লাগবে। কারন ফৌজদারি কার্যবিধি বলা হয়েছে যে, পুলিশের যুক্তিসংগত সন্দেহ হলে ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেপ্তার করা যাবে। আর যদি পুলিশ ব্যাতীত কোন সাধারণ নাগরিক বা ব্যক্তিবর্গ অপরাধকারী ব্যাক্তিকে বা অপরাধী বলে ঘোষিত কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেন । সেক্ষেত্রে দেরি না করে তাকে যতদ্রুত সম্ভব নিকটস্থ পুলিশ অফিসারের কাছে অর্পণ করবেন অথবা পুলিশ অফিসার না থাকলে তাকে থানা হেফাজতে দিবেন।
গ্রেপ্তার করতে গিয়ে আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না, যাতে কোন উক্ত ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম, বা সম্পত্তির হানি ঘটে । গ্রেফতারের পর দেহ তল্লাশী করে পরিধেয় বস্ত্র ব্যতীত যে সকল মালামাল পাওয়া যাবে তার তালিকা তেরি করে আসামীকে এক কপি দিতে হবে। গ্রেফতারকৃত ব্যাক্তি যদি মহিলা হয় তাহলে অবশ্যই অপর কোন মহিলা দ্বারা তার দেহ তল্লাশী করতে হবে। আটকস্ত ব্যাক্তি যদি মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ বা অসুস্থ হয় তাহলে তাকে হাতকড়া পড়ানো যাবে না। গ্রেফতারের পর কোন প্রকারের শারিরীক নির্যাতন বা নিষ্ঠুর ব্যবহার করা যাবে না। কোন প্রকারের জোর পূবক স্বীকারোক্তি আদায় করা যাবে না। থানা হাজতে থাকার জন্য ৩৬ বগ ফূট স্কেল বিশিষ্ট জায়গা দিতে হবে। কোনরকম আহত বা অসুস্থ হলে তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে এবং সুপেয় পানি ও খাবার সরবরাহ করতে হবে। আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট হাজির করতে করবেন। কোনো পুলিশ অফিসার যদি কাউকে পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার করেন, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ব্যতীত ২৪ ঘণ্টার বেশি নিজের হেফাজতে রাখতে পারবেন না। ২৪ ঘণ্টার আগেই ধৃত ব্যক্তিকে নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির করতে হবে ।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে তার পছন্দমত উকিল নিয়োগ করে সাহায্য নেয়ার জন্য যথাযথ সুযোগ প্রদান করবেন। ১৫ দিনের বেশী পুলিশ হেফাজতে (রিমান্ড) রাখা যাবে না । পুলিশ থেকে ম্যাজিস্ট্রেট সবাই দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করবেন। যদি কোন শিশুকে গ্রেপ্তার করা হয় তাহলে শিশু আইনের ৪৮ ধারা মোতাবেক তাকে জামিন দিতে হবে । শিশুদের বড়দের সাথে বিচার করা যাবে না, শিশুদের জামিন দিতে হবে, কারাদন্ড দেয়া যাবে না এবং সংশোধনমূলক প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে হইবে। (শিশু আইন)। আসামীর অপরাধটি যদি জামিন যোগ্য হয় তাহলে তাকে জমিনে মুক্তি দিবেন। বিশেষ ক্ষেত্রে জামিনের অযোগ্য অপরাধেও জামিন দিতে হবে বিবেচনা সাপেক্ষ । প্রয়োজনে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে মওকুফ করবেন। আদালতে বা ম্যাজিস্ট্রেট কে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে বাধ্য করা যাবে না। অভিযুক্ত ব্যাক্তি রাজসাক্ষী হতে পারিবেন। সাফাই সাক্ষী নিতে গিয়ে শপথ নেয়া যাবে না। শ্রেণীভুক্ত হয়ে বিশেষ সুবিধা নিতে পারিবে।
যে কোন রিপোর্টের নকল পাবে । বিচারে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ দাবী করতে পারবে। আনীত অভিযোগ অপ্রমাণের দায়িত্ব চাপানো যাবে না অভিযুক্তের উপস্থিতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ করতে হবে। বিচার পরবর্তী নির্দোষ হলে বেকসুর খালাস পাবেন। অমানবিক বা নিষ্ঠুর দন্ড দেওয়া যাবে না। যদি আদালতের রায়ে অসন্তুষ্ট হন তাহলে আপীলের সুযোগ পাবেন। দন্ডিত হওয়ার ক্ষেত্রেও জামিন পাবে। হাইকোর্টের অনুমোদন ছাড়া মৃত্যুদন্ড কারযকরী করা যাবে না। গর্ভবতী মহিলার ক্ষেত্রে মৃত্যুদন্ড স্থগিত রাখিতে হবে । যে কোন ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের অধিকার থাকবে। এবং একই অভিযোগে কোন ব্যাক্তিকে দুইবার বিচারের আওতায় আনা যাবে না । সবশেষে বলব, আসুন সবাই আমাদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ হই, দেশের আইনকানুন মেনে চলি। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তথা ন্যায়ভিক্তিক সমাজ গঠনে এগিয়ে যায়।
তথ্য সূত্র :-
কার্যবিধি ধারা :- ৫২/৫৬/৬১/৮০/১৬৩/১৬৪(৩)/১৬৭/২০৫/৩৩৭/৩৪৭/৩৮২/১৭৩(৪)/৩৫৩/২৪৫(১)/ ৪০৩/ ৪০৭/৪০৮/৪২৬/ ৪৪২/৪৯৬/৪৯৭ /৫৪৫ প্রভৃতি।
পিআরবি:- ধারা: ২২১/৩১৭/৩২১/৩২২/৩২৪/৩২৭/৩২৮/৩৩০/৩৩৩/৪৭৮/৪৫৯/৪৮৭ প্রভৃতি।
সংবিধান অনুচ্ছেদ :- ৩১(১)/৩২(২)/৩৫(২)/৩৫(৩)/৩৫(৫)/৩৫(৬) প্রভৃতি।
দন্ডবিধির :- ধারা: ৩৩০/৩১১ প্রভৃতি।
সাক্ষ্য আইন:- ধারা: ২৪/১২৬/১১৬/১০১/ প্রভৃতি।
নারী ও শিশু নির্যাতন আইন:- ধারা: ৩১
শিশু আইন:- ধারা: ৪৮ প্রভৃতি।

Comments

Popular posts from this blog

ফৌজদারি মামলা ?

কোন আদালতে ফৌজদারি মামলা পরিচালিত হয়? √সাধারন ভাষায় কোন ব্যক্তিকে যখন মারামারি, চুরি,ডাকাতি,খুন, যখম, প্রতারনা, দস্যুতা, রেইপ, অপহরণ, বে-আইনি সমাবেশ, ইভ-টিজিং , জালিয়াতি, মিথ্যা সাক্ষ্যদান প্রভুতি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে তার বিরুদ্বে মামলা দায়ের করা হয় তাকে বলে ফৌজদারি মামলা ক্রিমিনাল কেস। পেনাল কোডে অপরাধ এবং এর শাস্তির পরিমাণ উল্লেখ আছে কিন্তু কিভাবে অপরাধিকে শাস্তি দেয়া হবে তার কথা উল্লেখ আছে কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮ বা ফৌজদারি কার্যবিধিতে। ব্যাপক ভাবে ক্রিমিনাল আদালত তিনভাগে বিভক্ত: (ধারা-৬) ব্যক্তির অধিকার ও সম্পত্তির অধিকার ব্যতিত যেকোনো অপরাধ ফৌজদারি মামলার অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় রাজনৈতিক হাঙ্গামা, ব্যক্তির জীবন হরণ, অর্থসম্পদ লুটপাট ও যৌন হয়রানির অপরাধে ফৌজদারি মামলার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। এক কথায় চুরি, ডাকাতি, খুন, জখম, প্রতারণা, দস্যুতা, লুটপাট, বিস্ফোরণ, ধর্ষণ, অপহরণ, বেআইনি সমাবেশ, যৌন হয়রানি, জালিয়াতি, মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান প্রভৃতি অপরাধে যেসব মামলা দায়ের করা হয় তাকে ফৌজদারি মামলা বলা হয়। এসব মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে জেল জরিমানা...

প্লাস্টিকের পাত্রে গরম চা হয়ে ওঠে বিষাক্ত খাবার!

আমাদের আড্ডায় অন্যতম অনুসঙ্গ হয়ে উঠেছে চা-কফি। রাস্তার পাশের ছোট চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন রেস্তোরায় চা-কফির পেয়ালা হিসেবে প্লাস্টিকের তৈরি ওয়ানটাইম গ্লাস বেশ জনপ্রিয়। চা কফি, গরম স্যুপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন তরল খাবার আমরা খেয়ে থাকি এই সব প্লাস্টিক সামগ্রিতে। ক্রেতারা নিজের মতো বহন করতে পারেন, আর বিক্রেতারা সহজলভ্যতার কারনে এসব প্লাস্টিকের সামগ্রী ব্যবহার করেন। কিন্তু এর ক্ষতিকারক দিকটি জানা আছে কি? চিকিৎসকরা বলছেন এই প্লাস্টিকের সামগ্রীতে গরম তরল খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ থেকে অনেক জটিল জটিল রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। প্লাস্টিকের পাত্রে গরম খাবার খাওয়া একদমই ঠিক না। হার্ট, কিডনি, লিভার, ফুসফুস এবং ত্বকও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমনকী, স্তন ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। পুরুষদের ক্ষেত্রে শুক্রানু কমে যায়। গবেষকরা জানিয়েছেন, প্লাস্টিকের মধ্যে থাকা বিসফেনল-এ নামের টক্সিক এ ক্ষেত্রে বড় ঘাতক। গরম খাবার বা পানীয় প্লাস্টিকের সংস্পর্শে এলে ওই রাসায়নিক খাবারের সঙ্গে মেশে। এটি নিয়মিত শরীরে ঢুকলে মহিলাদের ইস্ট্রোজেন হরমোনের কাজের স্বাভাবিকতা বিঘ্নিত হয়। প্লা...

পুলিশ পেট্রোল বা পুলিশ টহল কত প্রকার ও কি কি?

পেট্রোল ডিউটি পুলিশ অফিসারদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ডিউটি। পুলিশ পেট্রোল ডিউটিকে সাধারণ ৮ ভাগে ভাগ করা যায়। নিম্নে এ গুলোর বর্ণনা করা হলোঃ ১। ফুট পেট্রোলঃ পায়ে হেঁটে নির্ধারিত স্থানে পাহারা দেয়াকে ফুট পেট্রোল বলে। ২। মোবাইল পেট্রোলঃ গাড়ীতে চড়ে নির্দিষ্ট এলাকা পাহারা দেয়াকে মোবাইল পেট্রোল বলে। ৩। বোট পেট্রোলঃ নৌকা, লঞ্চ বা স্পীড বোটে চড়ে নদী বা হাওরে পাহারা দেয়াকে বোট পেট্রোল বলে। ৪। ফিক্সড পেট্রোলঃ রাস্তার সংযোগস্থলে, হাটে, বাজারে, রেলস্টেশন ইত্যাদি স্থানে দাঁড়িয়ে পাহারা দেয়াকে ফিক্সড পেট্রোল বলে। ৫। ব্লক পেট্রোলঃ কোন নির্দিষ্ট স্থান ঘেরাও করে ঐ স্থানের জনগণের গতিবিধি লক্ষ্য করাকে ব্লক পেট্রোল বলে। ৬। এ্যাম্বুস পেট্রোলঃ কোন নির্দিষ্ট এলাকায় গোপনভাবে চুপচাপ বসে থেকে পথিকের গতিবিধি লক্ষ্য করাকে এ্যাম্বুস পেট্রোল বলে। ৭। ক্লক ওয়াইজ ও এন্টি ক্লক ওয়াইজ পেট্রোলঃ ঘড়ির কাটা যেভাবে ঘোরে ঐভাবে যথা “ক” সেন্টার হতে এক পার্টি পেট্রোল করতে করতে কোন নির্দিষ্ট স্থানে পৌছবে এবং ঐ পার্টি পথিমধ্যে সন্দেহজনক ব্যক্তি পেলে চ্যালেঞ্জ করবে ও প্রয়োজনে গ্রেফতার করবে। অন্য কোন পার্টি ঐ “ক” স...